হামজার অভিষেকে জয়ের আশা

আঁকাবাঁকা রাস্তার সঙ্গে উঁচু-নিচু পাহাড়। শীতের আবহে শিলংয়ের রাজপথের সবুজালয়ের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য মুগ্ধতা ছড়ায়। সৌন্দর্যেও মেঘালয়ের রাজ্যে ফুটেছে ফুটবলের ফুল। পর্যটনের নগরীতে এই প্রথম বড় কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ। শিলংয়ের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এটা ঐতিহাসিক। ইতিহাসের সাক্ষী হতে ৩০ হাজার ধারণক্ষমতার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম যে পরিপূর্ণ হবে, তা এখানকার মানুষের আবেগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। 

বাংলাদেশের জন্যও এটা আবেগের ম্যাচ। হামজা দেওয়ান চৌধুরী নামক ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা কোনো ফুটবলার এই প্রথম লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়াবেন। বিশ্বমানের ফুটবলারের স্কিলের দক্ষতা, পায়ের ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় শিলং। শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এ ডিফেন্সিভ ডিফেন্ডারের অন্তর্ভুক্তিতে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার কাছে এটাই বাংলাদেশের সেরা দল! মুখের কথার সঙ্গে বাস্তবেও সেরাটা মেলে ধরতে বদ্ধপরিকর অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। 

দক্ষিণ এশিয়ার ডার্বি খ্যাত বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল লড়াই নিয়ে উন্মাদনা বইছে। সবুজ গালিচাতেও যে উত্তাপ ছড়াবে, তা তো অতীতের লড়াইয়ে দেখা গেছে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে আজ জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচে অন্যরকম এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় সবাই। যে লড়াইয়ের প্রাণে দুই দেশের দুই তারকা। বাংলাদেশের হামজা চৌধুরী আর অবসর ভেঙে ফেরা ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রি।

বাংলাদেশ-ভারত লড়াই মানেই উত্তাপ। সেটা ক্রিকেটের ২২ গজে কিংবা ফুটবলের সবুজ গালিচায়। আর এবারের ফুটবল ম্যাচটি অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। হামজার কারণে বাংলাদেশিদের আশা এবার ভারতকে হারাতে পারবে। গত ২২ বছর ধরে প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে শুধু খেলেই গিয়েছিল লাল-সবুজের দলটি, কিন্তু জয়ের স্বাদ পায়নি। ২০০৩ সালে সেই জয়ের পর অনেকবারই ভারতকে হারানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছিল, বেশির ভাগ সময়ই ছেত্রির অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের কাছে জয়বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। ১০ মাস আগে ফুটবলকে বিদায় জানানো ভারতীয় দল ছেত্রিকে ফিরিয়ে এনেছে ভুলে যাওয়া জয়ের স্বাদ পেতে। ১৯ মার্চ এই শিলংয়েই প্রীতি ম্যাচে মালদ্বীপকে হারিয়েছে তারা। তাই আজ বাংলাদেশ-ভারত লড়াইয়ে সবার চোখ থাকবে হামজা ও ছেত্রির দিকে। 

গতকাল ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে দু’দলের কোচকে উত্তর দিতে হয়েছে হামজা ও ছেত্রিকে নিয়ে। তবে দুই কোচের কাছে এই লড়াইটি কোনো ব্যক্তির মধ্যে নয়, দলগত। ‘আমি মনে করি না হামজা ও ছেত্রির লড়াই এটা। বরং ফুটবল দলগত খেলা। জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় দলগত পারফরম্যান্সেই। কূটনৈতিক ভাষায় কথা বলা বাংলাদেশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা এটাও জানেন, হামজার অন্তর্ভুক্তিতে তাঁর দল কতটা শক্তিশালী, ‘আমি যতদিন ধরে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আছি, আমার কাছে মনে হয়েছে এই দলটিই সেরা। কারণ এখানে হামজার মতো বিশ্বমানের এক ফুটবলার এসেছেন। আমাদের প্রস্তুতিও ভালো। আশা করি, আগামীকাল (আজ) ভারতকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারব।’

ক্যাবরেরার সেই চ্যালেঞ্জ যে ফুটবলাররা নিয়েছেন পাশে বসা অধিনায়ক জামালের কথাতেও তা স্পষ্ট। ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রায় ৬০ হাজার দর্শককে চুপ করে দেওয়ার সেই মুহূর্তটি এখনও হৃদয়ের কোণে গেথে আছে ডেনমার্ক প্রবাসী এ ফুটবলারের। 

এবার শিলংয়ে ড্র নয়, ভারতের মাটি থেকে ৩ পয়েন্ট নিতে চান জামাল, ‘ আমাদের টার্গেট ৩ পয়েন্ট। আমি যেমন চাই, সবাই তেনন চান। আমরা সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’ মানসিকভাবে শক্তিশালী বাংলাদেশ আজকের ম্যাচ জিতলে নতুন ইতিহাসও ঘটবে। এই প্রথম ভারতকে তাদের মাটিতে হারাবে।

পাঠকের মন্তব্য