ডিজিটাল ব্যাংক করতে চায় রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স

ডিজিটাল ব্যাংক করতে আগ্রহী দেশের বেসরকারি খাতের জীবনবিমা কোম্পানি প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স। সম্প্রতি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ডিজিটাল ব্যাংক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে নিজেদের এই আগ্রহের কথা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে কোম্পানিটি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার ডিজিটাল ব্যাংক করার আগ্রহের এই কথা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এককভাবে নয়, আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী তারা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক করতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন করবে। যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া যায়, তবে ওই ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করবে কোম্পানিটি। অর্থাৎ ডিজিটাল ব্যাংকের মূলধন বিনিয়োগের ৫ শতাংশের মালিকানা থাকবে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের হাতে।

প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশ পাওয়ার পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে আবির নামে একজন লেখেন, প্রায়ই প্রতিষ্ঠানটির নানা অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ পেতে দেখি। এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে যদি ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমতি দেওয়া হয় তা হবে অনেক বড় ভুল। 

গত কয়েক বছর আগে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের করা 'কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি প্রগতি লাইফের'  শিরোনামের লিংক শেয়ার করে হাসান নামের এই ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্টে লেখেন। কিভাবে সম্ভব যাদের রাজস্ব ফাঁকি, কমিশনে অনিয়ম, হিসাবে গরমিল, সম্মেলনের নামে আর্থিক অনিয়ম, পরিচালকদের অনৈতিক সুবিধা, এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্ট প্রশিক্ষণ ব্যয়ে অনিয়মসহ নানাবিধ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হবে না। 

সে সময় সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স সরকারের কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি। গ্রুপ ব্যবসা সংগ্রহের ফির ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বিধিমালা মোতাবেক ব্যাংকের সার্ভিস চার্জের ওপর সঠিকভাবে ভ্যাট পরিশোধ না করে এ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের লেনদেনেও ব্যাপক অনিয়মেরও অভিযোগ উঠে তখন। অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব সমন্বয় করায় প্রতিষ্ঠানটিতে মানি লন্ডারিং হওয়ার আশঙ্কা করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

প্রগতি লাইফের ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরুল ফারুক হাসান অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ এই তিন বছরে ব্যাংক সার্ভিস চার্জের ওপর অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৬২ টাকা। এর মধ্যে ২০১২ সালের ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫ টাকা, ২০১৩ সালের ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ৫  এবং ২০১৪ সালের ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ১৮২ টাকা রয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছিল, প্রগতি লাইফের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ভ্যাটের টাকা নির্ধারিত হিসাবে জমা করা সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রগতি লাইফ ১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৬২ টাকা ভ্যাটের বিপরীতে কোনো ট্রেজারি চালান দেখাতে পারেনি।

পাঠকের মন্তব্য