ডিজিটাল বিশ্বাস পুনর্গঠনে গণমাধ্যম, সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান
-
- - নিজস্ব -
- প্রতিবেদক --
- ২ নভেম্বর, ২০২৫
যুগোপযোগী ডিজিটাল শাসন ব্যবস্থা তৈরির প্রত্যয় নিয়ে শেষ হলো তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (বিআইজিএফ)’। শনিবার (১ নভেম্বর) ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ওয়ার্কশপ ও নীতি আলোচনার মধ্য দিয়ে এই ফোরামের ২০তম আসর সমাপ্ত হয়।
ফোরামের শেষ দিনে ‘মিডিয়া ও ডিজিটাল বিশ্বাস: ভুয়া তথ্যের যুগে জনআস্থা টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক যুগান্তরের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ইনচার্জ সাইফ আহমাদ। ডিজিটাল যুগে সংবাদমাধ্যম কীভাবে জনগণের আস্থা রক্ষা করতে পারে, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ করতে পারে এবং অনলাইনে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে পারে, তা তিনি তার প্রবন্ধে তুলে ধরেন।
সাইফ আহমাদ বলেন, “আমরা এমন এক সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে তথ্যের অভাব নেই, কিন্তু বিশ্বাসের অভাব ভয়াবহ। সত্য–মিথ্যার সীমারেখা ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। তবুও গণমাধ্যম কর্মীরা এখনো সত্যের পক্ষে লড়ছে—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
তিনি ডিজিটাল বিশ্বাস পুনর্গঠনে একটি প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সাংবাদিকরা সত্য বলবে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছতা রাখবে, সরকার নিয়ন্ত্রণ নয় বরং স্বাধীন ফ্যাক্টচেকিং উদ্যোগকে উৎসাহ দেবে। আর জনগণ সচেতন হবে। সচেতন নাগরিকরাই ভুয়া খবরের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধক।” তিনি আরও যোগ করেন, “ভুয়া তথ্য আমাদের বিভক্ত করে, কিন্তু সাহসী সত্য আমাদের এক করে। চলুন আমরা সবাই মিলে সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনি।”
দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক ও সেন্টার ফর টেকনোলজি জার্নালিজম-এর সভাপতি হাসান জাকিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সেশনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, “ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রবাহ দ্রুত হলেও, বিভ্রান্তিকর তথ্যের ঝুঁকিও বেড়েছে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে সাংবাদিকদের ভূমিকা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদমাধ্যম শুধু তথ্য দেয় না, বরং সত্য, নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক।” তিনি আরও বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যাচাই–বাছাই ছাড়া কোনো তথ্য প্রচার করা উচিত নয়, কারণ দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই পারে ডিজিটাল ট্রাস্ট ও সামাজিক স্থিতি বজায় রাখতে।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় যমুনা টেলিভিশনের গবেষক জাহিদ হোসেন খান বলেন, সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সচেতন হতে হবে এবং গণমাধ্যমের প্রতি বিশ্বাস বাড়াতে সাংবাদিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের আওতায় আনা প্রয়োজন।
এএফপি’র ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক (বাংলা) মোহাম্মদ ইয়ামিন ভুয়া তথ্য শনাক্তের কৌশল তুলে ধরে বলেন, “চটকদার, চিত্তাকর্ষক ও আবেগী কোনো পোস্ট দেখলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অবশ্যই তা ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিতে দেখা উচিত। নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে নিশ্চিত হয়ে তবেই সেগুলো শেয়ার করা যেতে পারে।”
বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু জানান, তিন দিনের এই ফোরামে শিশু-কিশোরদের নিয়ে একটি কর্মশালা ছাড়াও মোট নয়টি বিষয়ে প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফোরামে সরকার, বেসরকারি খাত, টেকনিক্যাল কমিউনিটি, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ, তরুণ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।