বন্ধুত্বের অবমূল্যায়ন ও সামাজিক অবক্ষয়
-
- - নিউজ -
- ডেস্ক --
- ৪ মে, ২০২৫
রুবাইয়া বিধু
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের সমাজে একটি বিষয়ের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়—বন্ধুত্বের সংজ্ঞা। বিশেষ করে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসনে 'ফ্রেন্ড' শব্দটি আজ যেন শুধুই একটি সংখ্যা, একটি অনলাইন তালিকার উপাদান। ইনকাম জেনারেট করার প্রবণতা, জনপ্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশ্য, কিংবা কন্টেন্ট ছড়ানোর নামে বন্ধুত্ব আজ এক ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক হয়ে উঠছে। ফলে প্রকৃত বন্ধুত্বের যে আন্তরিকতা, গভীরতা ও দায়িত্ববোধ—তা হারিয়ে যাচ্ছে।
একসময় বন্ধুত্ব গড়ে উঠত আত্মিক মিলের ভিত্তিতে। চিন্তাধারায় মিল, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মানসিক সামঞ্জস্য—এসবই ছিল বন্ধুত্বের ভিত্তি। আজ তা ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, cognitive height (মানসিক উচ্চতা বা চিন্তাশক্তির গভীরতা) এবং social height (সামাজিক মর্যাদা বা অবস্থান) না মেলাতেও কেবল বাহ্যিক আকর্ষণ, উপকার বা প্রদর্শনের জন্য সম্পর্ক গড়ে উঠছে। ফলে এসব সম্পর্ক হয় স্বল্পস্থায়ী, ঠুনকো, এবং মাঝেমধ্যেই বিশ্বাসঘাতকতায় পরিণত।
এই ভঙ্গুর সম্পর্কগুলো সামাজিক অবক্ষয়েরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মানুষ এখন সম্পর্ককে দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে নয়, বরং লাভ-ক্ষতির হিসাবে দেখে। যেসব বন্ধুত্ব চিন্তার জায়গা থেকে তৈরি হয় না, সেসব বন্ধুত্ব একসময় বিভ্রান্তি, মনোমালিন্য এমনকি বিশ্বাসহীনতার জন্ম দেয়। সমাজে তখন ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির আস্থা কমে যায়, ভ্রাতৃত্বের বোধ দুর্বল হয়ে পড়ে।
বন্ধুত্ব এমন এক সম্পর্ক—যেখানে কেউ কারো জীবনের কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায়, এমনকি সম্পত্তির দায়িত্ব গ্রহণেরও যোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু আজকাল সেই বন্ধুর সংজ্ঞা ফেসবুকের স্ক্রিনে একগুচ্ছ নামের ভেতর আটকে গেছে।
এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। প্রয়োজন, বন্ধুত্ব গড়ার আগে চিন্তা-ভাবনায় মিল খোঁজার। কারো সাথে সামাজিক অবস্থান মিলে বা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেই সে বন্ধু—এই মনোভাব থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সমাজের ভারসাম্য রক্ষায়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনতে চাই মানসিক উচ্চতা ভিত্তিক বন্ধুত্ব, বাহ্যিক প্রভাব নয়।
লেখক একজন কলামিস্ট।