গবেষণা ও উদ্ভাবন নিশ্চিত করবে ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা: ৩য় যুব ফোরাম

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)-তে আজ শনিবার, ওআইসি-কমস্টেক (OIC-COMSTECH), ইসলামিক ফুড সিকিউরিটি সংস্থা (IOFS), ও এনএসইউর যৌথ আয়োজনে ৩য় কৃষি জৈবপ্রযুক্তি যুব ফোরামের উদ্বোধনী সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে নীতি নির্ধারক, শিক্ষাবিদ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জৈবপ্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ; সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওআইসি-কমস্টেক এর কো-অর্ডিনেটর জেনারেল অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী; ইসলামিক ফুড সিকিউরিটি সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত খুসরভ নোজিরি। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান জনাব আজিজ আল কায়সার; এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য জনাব এমএ কাশেম; এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য জনাব বেনজীর আহমেদ; এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য মিসেস ইয়াসমিন কামাল। সেশনটির সভাপতিত্ব করেন এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এনএসইউর কোষাধ্যক্ষ ও উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রব খান।

পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, জাতীয় সঙ্গীত এবং এনএসইউর অর্জন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।

স্বাগত বক্তব্যে কমস্টেক ফোকাল পারসন ফর বাংলাদেশ ও এনএসইউর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান, বলেন, “জৈবপ্রযুক্তি কৃষি ও পুষ্টি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন পথ খুলে দিতে পারে। আমাদের যুব সমাজকে এ যাত্রার নেতৃত্ব দিতে হবে এবং জ্ঞানকে বাস্তব সমাধানে রূপান্তর করতে হবে।

প্রধান অতিথি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, যার জন্য আমাদের জিনোম বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ। কৃষিতে পুষ্টি, স্থিতিশীলতা এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে জীবপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষায়, গবেষণায় এবং অভিযোজ্য প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

রাষ্ট্রদূত খুসরভ নোজিরি বৈশ্বিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা একটি সম্মিলিত চ্যালেঞ্জ। এই ফোরাম যুব বিজ্ঞানীদের জ্ঞান ভাগাভাগি ও নেটওয়ার্ক তৈরি করার সুযোগ দেয়। জনসাধারণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য জিনোম প্রযুক্তি নিরাপদ, স্বচ্ছ ও নৈতিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা আজকের বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য আমাদের যুবকদের সঠিক সরঞ্জাম, আধুনিক প্রযুক্তি এবং সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তব সমাধানে রূপান্তর করতে পারে। ফোরামের মতো প্ল্যাটফর্ম তাদের নতুন ধারণা বিনিময় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।

এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান জনাব আজিজ আল কায়সার বলেন, “কৃষি মানুষের জীবনের ভিত্তি, এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আজকের বিশ্বে বড় চ্যালেঞ্জ। উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা কৃষকদের জন্য টেকসই সমাধান তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারি। এনএসইউ থেকে আমরা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে পারি, কিন্তু মূল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে যুব গবেষকরা, যারা নতুন ধারণা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাস্তব সমস্যার সমাধান করবে।"

বিশেষ অতিথি জনাব এম.. কাশেম বলেন, “শিক্ষা ও গবেষণায় নেতৃত্বের মাধ্যমে সমাজে বাস্তব পরিবর্তন আনবে এমন একটি স্বপ্ন নিয়েই এনএসইউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ আমরা শিক্ষা, গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পেরেছি। এই প্ল্যাটফর্মটি শুধু নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়, বরং যুব গবেষকদের উদ্ভাবন ও কার্যকর সমাধান বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষ অতিথি জনাব বেনজীর আহমেদ বলেন, “আমাদের কাছে পরিবর্তন আনতে পর্যাপ্ত সম্পদ ও মানবসম্পদ রয়েছে। আমি ওআইসিকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষভাবে কৃষি, জীবপ্রযুক্তি এবং খাদ্য নিরাপত্তা ক্ষেত্রে উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক, যাতে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়।

সেশনটির সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য নিরাপদ ও টেকসই হতে হবে। জিনোম এডিটিং একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। ছাত্র ও যুব গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করে আমরা একটি প্রজন্মকে তৈরি করছি যারা খাদ্য নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এনএসইউর কোষাধ্যক্ষ ও উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রব খান। তিনি বলেন, “আজকের সংলাপ কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি অর্থবহ সহযোগিতার নতুন পথ খুলেছে। একাডেমিয়া ও আন্তর্জাতিক সংস্থা একসাথে কাজ করলে বাস্তবসম্মত সমাধান উদ্ভাবন সম্ভব।

দুইদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে (১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সেশনের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, আজারবাইজান, পাকিস্তান, কাজাখস্তান ও অন্যান্য দেশের বক্তারা অংশগ্রহণ করছেন। আন্তর্জাতিক এই কর্মশালাটি কৃষি-জৈবপ্রযুক্তিতে জ্ঞান ভাগাভাগি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে।

পাঠকের মন্তব্য