ফেসবুকে পোস্ট করায় সাবেক কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রামীণফোনের মামলা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় সাবেক কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে।

সাবেক কর্মীদের দাবি, শ্রম অধিকার আদায়ের আন্দোলন দমন করতে প্রতিষ্ঠানটি এই ধরনের ‘হীন ও প্রতিশোধমূলক’ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

গ্রামীণফোনের করা দুটি মামলায় মোট ১৯ জন সাবেক কর্মীকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

সর্বশেষ ২৫ আগস্ট ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর পোস্ট’ করার অভিযোগে একটি ফৌজদারি মামলা করে গ্রামীণফোন। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে সাবেক কর্মীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পর আরও একটি মামলা হয়, যেখানে ২৯ জনকে আসামি করা হয়।

সাবেক কর্মীদের অভিযোগ, এই মামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের আন্দোলন দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সাবেক কর্মী আদীবা জেরিন চৌধুরী বলেন, “গত ১৫ বছরে গ্রামীণফোন পরিকল্পিতভাবে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করেছে এটা জেনেও যে শ্রমিকরা সহসা প্রতিকার পাবে না এবং তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আদালতে মামলা বিলম্বিত করতে পারে। আমরা কেবল আমাদের ন্যায্য পাওনা চেয়েছিলাম, তবুও গ্রামীণফোন কঠোর ব্যবস্থা, গ্রেপ্তার এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও আমাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করা হয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানাচ্ছি - এই অবিচার চলতে পারে না।”

সাবেক কর্মী মাকসুদা খাতুন বলেন, “গ্রামীণফোন আমাদের আইনত প্রাপ্য ৫ শতাংশ বিলম্ব জরিমানা পরিশোধ না করে আমাদের ন্যায্য আন্দোলন দমন করার জন্য হয়রানিমূলক মামলা করেছে। আইনগত অধিকার দাবি করা কর্মীদের ভয় দেখানোর জন্য মামলা ব্যবহার করা কখনই গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। এটি কর্মীদের প্রতি অবিচার।”

বিরোধটির কেন্দ্র করে রয়েছে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) বিতরণ সংক্রান্ত দাবি। ২০১০-২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য (ডব্লিউপিপিএফ) প্রদান না করায় বিষয়টি আদালতে গড়ায়। আদালতের রায়ে ২০১৪-১৫ সালের ফান্ড পরিশোধ করা হলেও, বাকি অর্থ এখনও বকেয়া রয়েছে বলে অভিযোগ সাবেক কর্মীদের।

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ২৩৪ ধারা অনুযায়ী, (ডব্লিউপিপিএফ) পরিশোধ না করলে ‘উচ্চ জরিমানা’ দিতে হয়। 

২০২৩ সালের মার্চে গ্রামীণফোন আদালতে করা আপিল প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এই জরিমানা প্রদানের পথে আর কোনো আইনি বাধা ছিল না।

তবে গ্রামীণফোন এক বিবৃতিতে বলেছে, “গ্রামীণফোনের কিছু সাবেক কর্মী চাকরি সংক্রান্ত নানাবিধ দাবি-দাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে একটি প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমাদের জানা মতে, তাদের বেশিরভাগ বেশ কয়েক বছর আগেই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যান এবং আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য গ্রহণ করেন। এছাড়া তারা যে দাবিগুলো তুলেছেন সেগুলো বর্তমানে মহামান্য আদালতে বিচারাধীন।”

গ্রামীণফোন বলছে, “বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি গ্রামীণফোন শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতেই এসব বিষয়ের নিষ্পত্তি হবে বলে বিশ্বাস করে গ্রামীণফোন। এছাড়াও আমাদের নজরে এসেছে যে, এই ব্যক্তিরা গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রামীণফোন, প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নির্দিষ্ট কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর তথ্য ও মন্তব্য ছড়াচ্ছেন। এ কারণে গ্রামীণফোন  যথাযথ আইনি আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।”

পাঠকের মন্তব্য