ভর্তি যুদ্ধ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন নিশ্চিতের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ ও হতাশা। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার নেমে এসেছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে, যা গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৯ হাজার ৯৭ জন, গতবারের তুলনায় প্রায় ৭৭ হাজার কম। ফলে ভর্তি পরীক্ষার সময় স্কোরে তা প্রভাব ফেলবে। 

কম জিপিএর কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখন দুশ্চিন্তায়, তারা আদৌ পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন কিনা। পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার সাত লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। অথচ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজসহ উচ্চশিক্ষার স্তরে আসন সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। ফলে সংখ্যার বিচারে আসন সংকট নেই; কিন্তু সমস্যা হলো মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত আসন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জানিয়েছে, দেশে কার্যক্রম চালু থাকা ৫৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন প্রায় ৫০ হাজার। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আসন রয়েছে আরও প্রায় পাঁচ হাজার। অর্থাৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ মেলে মোটামুটি ৫৫ হাজার শিক্ষার্থীর। সেই হিসাবে প্রায় সাত লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে শুধু এক ভাগ শিক্ষার্থীই এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবেন।

শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য থাকে বুয়েট, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে সীমিত আসনের জন্য এবার প্রতিযোগিতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন হতে যাচ্ছে।

যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তবে বেসরকারি ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিপুল আসন।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে আসন ছয় হাজার ৩৪০টি, প্রাইভেট ডেন্টালে এক হাজার ৩৫০টি এবং আর্মড ফোর্স মেডিকেল কলেজে ৩৫০টি।

এ ছাড়া শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্সে এক লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৯টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৬৪ কলেজে অনার্সে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫টি এবং পাস কোর্সে চার লাখ ২১ হাজার ৯৯০টি আসন রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজেই আছে প্রায় ২৩ হাজার ৬৩০টি আসন।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেক্সটাইল কলেজ, মেরিন কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে আরও প্রায় দুই লাখ আসন গত বছর থেকে খালি রয়েছে। ফলে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৩ লাখ আসনের মধ্যে অন্তত ছয় লাখ এবার ফাঁকা থাকতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় আসন সংখ্যা যথেষ্ট; কিন্তু মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ সীমিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে আসন সীমিত হওয়ায় সবাই সেখানে জায়গা পাবে না। তাই সরকারের উচিত হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা, যেন শিক্ষার্থীরা যেখানেই পড়ুক, দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের এই বাস্তবতায় অনেকের স্বপ্ন কিছুটা আঘাত পেলেও সামনে যে উচ্চশিক্ষায় সুযোগের দরজা একেবারে বন্ধ, তা কিন্তু নয়। বরং সঠিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই শিক্ষার্থীদের এখন এগিয়ে যেতে হবে– এ লড়াই শুধু উচ্চশিক্ষার আসনে জায়গা পাওয়ার নয়, বরং ভবিষ্যৎ গড়ারও

পাঠকের মন্তব্য