‌‌'শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে না কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে পারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো'

২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ৫৮.৮৩% হওয়ায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ফলাফলে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন পাস করেছেন, আর ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন ফেল করেছেন।

বর্তমানে দেশে ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকার থেকে কোনো আর্থিক অনুদান না পাওয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি তাদের আয়ের প্রধান উৎস। শিক্ষার্থী সংখ্যা কমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক সংকটে পড়ে, অনেক সময় বন্ধও হয়ে যায়।

ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ভর্তিতে উচ্চমাধ্যমিক/মাধ্যমিকের সর্বনিম্ন জিপিএ ২.৫০ প্রয়োজন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে এটি আরও বাড়ানো হয়।

২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩ থেকে ৫ পেয়েছেন ৬ লাখ ১৫ হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী। এই ফলাফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সংকট আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, মানহীন অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর সংকটে পড়লেও পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী পেতে মানোন্নয়নে সচেষ্ট হবে। কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে পারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে না।

আর শিক্ষার্থী কম পাস করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে আসবে বলে মনে করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড.এস এম এ ফয়েজ।

উচ্চশিক্ষায় সংখ্যা নয় বরং মানসম্মত শিক্ষা ও শিল্পের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মানবসম্পদ তৈরি করতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ বলছে ইউজিসি। 

ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১০টি। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় থাকা ১০২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো। এসকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই পড়ছেন ১০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের আগ্রহ বেশি থাকলেও আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও পড়াশোনার সুস্থ পরিবেশ থাকায় দিনদিন এ আগ্রহ আরও বাড়ছে। এছাড়া শিক্ষার মান ও গবেষণা বৃদ্ধি এবং যোগ্য শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান নিশ্চিত ও চাকরির বাজারে চাহিদা নির্ভর পাঠদান প্রদান করাসহ সেশনজন না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকছেন।

খাত সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, ১০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে শিক্ষার মান ও গবেষণা বৃদ্ধি এবং যোগ্য শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান নিশ্চিত ও চাকরির বাজারে চাহিদা নির্ভর পাঠদান প্রদানসহ কোয়ালিটি নিশ্চিত করা উত্তরা ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ফ্যাশন (বিইউএফটি), অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি, ইর্স্টান ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি এর মতো ইউনিভার্সিটিগুলোতে শিক্ষার্থীর সংকট খুব একটা দেখা যাবে না।

আধুনিক ক্যাম্পাস, শিক্ষার মান ও গবেষণা বৃদ্ধিসহ উচ্চ শিক্ষার সকল মান নিশ্চিতে গত কয়েক বছর ধরে এ সকল ইউনিভার্সিটিগুলো খুব ভালো করছে। এর জন্যই বাংলাদেশসহ বিশ্বমঞ্চের প্রতিযোগিতায় তাদের শিক্ষার্থীরা সুনাম অর্জন করছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত ডুয়াল ও ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ডুয়াল সেমিস্টার জানুয়ারি ও জুলাই মাসে শুরু হয়। আর ট্রাই সেমিস্টারের বিষয়গুলোতে স্প্রিং (জানুয়ারি-এপ্রিল), সামার (মে-আগস্ট), ফল (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)—এই তিনবার ভর্তির সুযোগ রয়েছে।   

পাঠকের মন্তব্য